গর্ভকালীন বিভিন্ন হরমোন ও এদের প্রভাব

গর্ভকালীন বিভিন্ন হরমোন ও এদের প্রভাব একজন গর্ভবতী নারীর শরীরে বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যায়। আজ এই পোস্টে আপনাদের সামনে গর্ভকালীন বিভিন্ন হরমোন ও এদের প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। তাই গর্ভকালীন বিভিন্ন হরমোন ও এদের প্রভাব নিয়ে সুস্পষ্ট ধারণা পেতে এই পোস্টটি একদম শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে ফেলুন।
গর্ভকালীন বিভিন্ন হরমোনসমূহ একটি নারীর শরীরকে গর্ভধারণ ও সন্তান প্রসবের জন্য প্রস্তুত করে থাকে। পাশাপাশি এসকল হরমোন শরীরে কিছু অস্বস্তিকর পরিবর্তনও নিয়ে আসতে পারে। আজ এই পোস্টটি থেকে আপনারা গর্ভকালীন বিভিন্ন হরমোন ও এদের প্রভাব, প্রাকৃতিক প্রসবে হরমোনের ভূমিকা কি, যদি গর্ভবতী নারীর হরমোনের সমস্যা হয় তাহলে কি করবেন ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ জেনে নিতে পারবেন। 

পোস্ট সূচিপত্র - গর্ভকালীন বিভিন্ন হরমোন ও এদের প্রভাব সম্পর্কে জেনে নিন 

প্রাকৃতিক প্রসবে হরমোনের ভূমিকা কি? - গর্ভকালীন বিভিন্ন হরমোন ও এদের প্রভাব  

আমাদের শরীর থেকে নিঃসৃত প্রাকৃতিক যে সকল রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে সেগুলোই হরমোন। শরীরের ভিতরে বিভিন্ন ক্রিয়া বিক্রিয়া সম্পন্ন করতে এ সকল হরমোন ব্যাপক ভূমিকা রাখে। সন্তান প্রসবের ক্ষেত্রেও দেহের অভ্যন্তরস্থ বিভিন্ন হরমোনের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। প্রাকৃতিক প্রসবের জন্য কিছু হরমোনের অবাদ প্রবাহ যেমন প্রয়োজন, তেমনি প্রসবকে বাধাগ্রস্ত করে এমন হরমোনও অনেক সময় দেহে প্রবাহিত হয়। প্রাকৃতিক প্রসবের প্রধান সহায়ক হরমোন হচ্ছে 'অক্সিটোসিন'।

একে ভালোবাসা হরমোনও বলা হয়। গর্ভকালীন সময়ে এই হরমোনটি তখনই প্রবাহিত হয় যখন একজন নারীর মাঝে অপ্রতিরোধ্যতা, আত্মসমর্পণ ও ভালোবাসা বোধ কাজ করে। এই হরমোনটি ভালোভাবে প্রবাহিত হওয়ার জন্য একজন নারীর নির্জনতার প্রয়োজন হয়। প্রসবকালীন সময়ে ভয় দূর করতে অ্যাড্রেনালিন হরমোন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই হরমোন প্রসবকালীন ব্যথা ও ভয়কে প্রশমন করতে সহায়তা করে। প্রসবকালে তাই নারীকে সুরক্ষা দিতে এই হরমোনের ভূমিকা অপরিসীম। 

গর্ভকালীন বিভিন্ন হরমোন ও এদের প্রভাবসমূহ - গর্ভধারণে হরমোনের ভূমিকা 

মানবদেহে এমন অনেক হরমোন রয়েছে যা গর্ভধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে থাকে। এ সকল হরমোনের বিভিন্ন কার্যক্রমের কারণেই গর্ভকালীন সময়ে একটি নারীর দেহ সন্তান প্রসব করার উপযোগী হয়ে ওঠে। গর্ভকালীন বিভিন্ন হরমোন ও এদের প্রভাবসমূহ সম্পর্কে চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
  • ফলিকল স্টিমিউলেটিং হরমোন (FSH): নারী দেহে রজঃচক্র নিয়ন্ত্রণ করে ও ডিম্বাশয়ের ডিমের পরিপূর্ণতায় ফলপ্রসূ ভূমিকা রাখে এই হরমোনটি। যে সকল মেয়েদের ডিম্বাশয় এর কার্যকারিতা কম থাকে, তাদের FSH হরমোন বেড়ে যায়। 
  • হিউমান প্লাসেন্টাল ল্যাক্টোজেন হরমোন: গর্ভাবস্থায় প্লাসেন্টা বা গর্ভফুল থেকে এই হরমোনটি সৃষ্টি হয়। নারীর শরীরের দুধ উৎপাদনে এই হরমোনটি ভূমিকা রাখে। এটি গর্ভকালীন সময়ে সন্তানকে পুষ্টি সরবরাহের সাহায্য করে এবং সন্তান প্রসবের পর এই হরমোন স্তনের দুধ গ্রন্থিকে উদ্দীপ্ত করে মায়ের স্তনে দুধ নিয়ে আসে।
  • ইস্ট্রোজেন হরমোন: নারী দেহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হরমোন হলো ইস্ট্রোজেন হরমোন। গর্ভাশয় থেকে সৃষ্টি হয়ে এই হরমোনটি নারীদের স্তনের বৃদ্ধি ও মাসিকের সূচনা করে। গর্ভকালীন সময়ে ইস্ট্রোজেন নতুন রক্তনালী তৈরি ও রক্ত সরবরাহ ব্যবস্থাকে মজবুত করে। এছাড়াও দেহে পুষ্টি উপাদান বাড়ানোর পাশাপাশি, বাড়ন্ত শিশুর বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। 
  • প্রজেস্টেরন হরমোন: এই হরমোনটি মূলত ডিম্বানু প্রতিস্থাপনের জন্য জরায়ুর প্রাচীরের পুরুত্ব বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে থাকে। শরীরের ভেতরের মাংসপেশিগুলোকে ঢিলা করে দেয় এবং জরায়ুকে পূর্ণাঙ্গ একটি মানব শিশু ধারণ করার উপযোগী করে তৈরি করে।

মেয়েদের গর্ভকালীন বিভিন্ন হরমোন ও এদের প্রভাবসমূহ সম্পর্কে আরও কিছু তথ্য 

প্রিয় বন্ধুরা! মেয়েদের গর্ভকালীন বিভিন্ন হরমোন ও এদের প্রভাব নিয়ে আপনারা ইতোমধ্যে ধারণা পেয়েছেন। এবার গর্ভকালীন বিভিন্ন হরমোন ও এদের প্রভাব তথা আরও কিছু হরমোন সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
  • লুটিনাইজিং হরমোন: পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয়ে এই হরমোনটি FSH এর সাথে মিলে ডিম্বপাত ও মাসিকের চক্র নিয়ন্ত্রণ করে। সহবাসের পর শুক্রাণু ও ডিম্বাণু মিলিত হলে লুটিনাইজিং হরমোন মেয়েদের জরায়ুকে সন্তান প্রসবের উপযোগী করে গড়ে তোলে। 
  • অক্সিটোসিন হরমোন: এই হরমোনটি মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস অংশ থেকে তৈরি ও পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয়। অক্সিটোসিন হরমোন সন্তান প্রসব ও ডেলিভারিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে থাকে। এ হরমোন জরায়ুর মাংসপেশির সংকোচন প্রসারণ ঘটায়। প্রসবের পরে এ হরমোন জরায়ুকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনে ও স্তনে দুধ আনতে সহায়তা করে। নবজাতকের সাথে মায়ের ইমোশনাল বন্ডিং তৈরিতেও এ হরমোন ভূমিকা রাখে। 
  • রিল্যাক্সিন হরমোন: প্রজননের রিলাক্সিন হরমোন ব্যাপকভাবে সহায়তা করে। সাধারণত ডিম্বপাতের পর রিলাক্সিন হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়, যা জরায়ুর প্রাচীরকে সন্তান ধারণের উপযোগী করে। প্রসবের জন্য এই হরমোন জরায় মুখকে নরম ও প্রসারিত করতে সাহায্য করে। এই হরমোনের কারণে অকালে প্রসবও বাধাগ্রস্ত হয়। 

যদি গর্ভবতী নারীর হরমোনে সমস্যা হয় তাহলে কি করবেন

প্রিয় পাঠক ইতোমধ্যে আপনারা গর্ভকালীন বিভিন্ন হরমোন ও এর প্রভাব সম্পর্কে সুস্পষ্ট ভাবে ধারণা পেয়েছেন। আশা করি গর্ভকালীন সময়ে কোন হরমোন কি ভূমিকা পালন করে তা আর আপনাদের অজানা নয়। এবার চলুন যদি গর্ভবতী নারীর হরমোনের সমস্যা হয় তাহলে কি করবেন সে বিষয়ে জেনে নিই।
  1. প্রথমত সঠিক খাদ্যাভ্যাস গ্রহণ করতে হবে। সকল প্রকার অস্বাস্থ্যকর ও ভেজাল খাবার পরিহার করতে হবে।
  2. ডায়াবেটিসের কারণে বিভিন্ন ধরনের হরমোনের সমস্যা সৃষ্টি হয়। তাই যথাসম্ভব ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। শরীরের ওজন স্থিতিশীল থাকতে হবে। 
  3. অ্যালকোহল, ক্যাফেইন ও ধূমপান থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে হবে। 
  4. হরমোনের পরিবর্তনের কারণে গর্ভাবস্থায় আকস্মিক খারাপ লাগা বা ভালো লাগা সৃষ্টি হতে পারে। ধৈর্যের সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এ অবস্থা মোকাবেলা করতে হবে। 
  5. কোন প্রকার ভারী কাজ করা যাবে না। গর্ভবতী নারীকে ফলিক এসিড জাতীয় খাবার খেতে দিতে হবে। সর্বদা বিশ্রামে থাকার চেষ্টা করতে হবে। 
  6. অন্তত ৮-১০ ঘন্টা ঘুম নিশ্চিত করতে হবে। হরমোনের কার্যকারিতা বাড়াতে প্রোটিন জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে। 
  7. এছাড়াও হরমোন জনিত যেকোনো সমস্যায়, বিচলিত না হয়ে যথাযথ স্বাস্থ্য বিধি মেনে জীবন যাপন করতে হবে। সবসময় ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে এবং হরমোন জনিত সমস্যা কাটিয়ে ওঠার জন্য সকলের কাছ থেকে সাহস জুগিয়ে নিতে হবে।

ইতি কথা - গর্ভকালীন বিভিন্ন হরমোন ও এদের প্রভাব 

প্রিয় বন্ধুরা!  আশা করি গর্ভকালীন বিভিন্ন হরমোন ও এদের প্রভাব সম্পর্কে আপনারা এই পোস্টটি থেকে একটি সুস্পষ্ট ধারণা পেয়ে গেছেন। পোস্টটি পড়ে উপকৃত হয়ে থাকলে অন্যদের সাথে শেয়ার করুন। এসকল হরমোন সম্পর্কে ধারনা আপনাকে গর্ভকালীন সময়ের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণে সহায়তা করবে। এতক্ষণ ধরে সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। @23891

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url