ডায়াবেটিস হলে কি যক্ষ্মা নিরাময় সম্ভব

অনেকেই প্রশ্ন করে থাকে ডায়াবেটিস হলে কি যক্ষ্মা নিরাময় সম্ভব? ডায়াবেটিস এর সাথে সাথে যক্ষ্মা একটি মারাত্মক রোগ। তাই কারো যদি ডায়াবেটিস এবং যক্ষ্মা একই সাথে হয় সাধারণত তাদের ডায়াবেটিস হলে কি যক্ষ্মা নিরাময় সম্ভব কিনা? এ বিষয়টি জেনে রাখা জরুরী। এই আর্টিকেলে ডায়াবেটিস হলে কি যক্ষ্মা নিরাময় সম্ভব? সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হবে।

তাহলে চলুন দেরি না করে ঝটপট ডায়াবেটিস হলে কি যক্ষ্মা নিরাময় সম্ভব কিনা? বিষয়টি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। উক্ত বিষয়ে জানতে হলে আপনাকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে।

সূচিপত্রঃ ডায়াবেটিস হলে কি যক্ষ্মা নিরাময় সম্ভব

ডায়াবেটিস হলে কি যক্ষ্মা নিরাময় সম্ভব জেনে রাখুন

অনেক সময় ডায়াবেটিস রোগীরা যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হয়। আমরা জানি যে দুইটি রোগ মারাত্মক। উক্ত রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের অবশ্যই ডায়াবেটিস হলে কি যক্ষ্মা নিরাময় সম্ভব? এ বিষয়গুলো জেনে রাখা জরুরী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, ডাইবেটিস যক্ষ্মার ঝুঁকি ৩ গুণ বাড়িয়ে দেয়। ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত নয় এরকম মানুষের চেয়ে ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে যক্ষ্মার প্রকোপ বেশি দেখা যায়।

আরো পড়ুনঃ 201 গম্বুজ মসজিদ - ২০১ গম্বুজ মসজিদ ছবি

ডায়াবেটিস রোগ যক্ষ্মার চিকিৎসাকে অকার্যকর করে তোলে। আবার উল্টো দিক থেকে যক্ষ্মা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বাতাস সৃষ্টি করে। যে ব্যাক্তি ডায়াবেটিস এবং যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত তার চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত যত্ন সহকারে করতে হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে গত ৩৫ বছরে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষদের মধ্যে ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বেড়েছে প্রায় চারগুণ।

আশির দশকে এ রোগের সংখ্যা ছিল ১০ কোটি ৮০ লাখ সেখান থেকে ২০১৪ সালে রোগের সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪২ কোটি ২০ লাখে। দিন দিন এই রোগের সংখ্যা আরো বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। কোন ব্যক্তি যদি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকে তাহলে যক্ষার ওষুধ তার শরীরে ঠিকভাবে কাজ করে না। আবার অন্যদিকে যক্ষার ওষুধ কিছু ক্ষেত্রে ডায়াবেটিসের ওষুধের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়।

তাই কারো যদি ডায়াবেটিস এবং যক্ষা একই সাথে হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই একজন ভালো চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ অথবা কোন ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত নয়। যেহেতু যক্ষা এবং ডায়াবেটিস পরস্পর বিপরীত আমি তাই এই ধরনের রোগীদের বিশেষভাবে যত্ন সহকারে ওষুধ সেবন এবং পর্যবেক্ষণে রাখতে হয়।

ডায়াবেটিস হলে কি যক্ষ্মার চিকিৎসা করা যায়

যদি ডায়াবেটিস অবস্থায় প্রচন্ড পরিমাণে কাশি হয় তাহলে অবশ্যই রক্ষা পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত। কারণ অনেক সময় ডায়াবেটিস থাকাকালীন অবস্থায় যক্ষা রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সাধারণত তখন ডায়াবেটিস হলে কি যক্ষ্মার চিকিৎসা করা যায়? এ ধরনের প্রশ্ন শোনা যায়। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বব্যাপী যক্ষা রোগের প্রদুর্ভাব বেড়ে চলেছে।

ঠিক তেমন ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা ও বেড়ে চলেছে। বাংলাদেশে পূর্বে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা যা ছিল তার থেকে অনেক গুণ বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে বর্তমানে। ভবিষ্যতে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা আরো বেশি বৃদ্ধি পাবে বলে আশঙ্কা করা হয়। সাধারণ মানুষের চেয়ে ডায়াবেটিস রোগীর মধ্যে যক্ষা রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে।

কারণ ডায়াবেটিস হলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় যার ফলে অল্প কাশি থেকে এবং যক্ষা রোগের জীবাণু থেকে যক্ষা রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। ডায়াবেটিস একজন রোগীর যক্ষা হওয়ার সম্ভাবনা তিনগুণ বাড়িয়ে দেয়। ডায়াবেটিস রোগ যক্ষ্মার চিকিৎসাকে অকার্যকর করে তোলে। সাধারণত তাই ডায়াবেটিস হলে কি যক্ষ্মার চিকিৎসা করা যায় কিনা? এ ধরনের প্রশ্ন করে থাকে।

আমরা জানি ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ যা দ্বারা শরীরের বেশিরভাগ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। আবার যক্ষা রোগ অনেক সময় শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। যদি ডায়াবেটিস রোগীর রক্ষা হয় তাহলে চিকিৎসার সময় অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। যদি ডায়াবেটিস রোগের চিকিৎসা নেওয়া হয় তাহলে এটি যক্ষা রোগের বিরূপ প্রভাব পড়ে।

আবার যখন যক্ষা রোগের জন্য চিকিৎসা নেওয়া হয় অথবা ওষুধ সেবন করা হয় এটি ডায়াবেটিস রোগের ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব পড়ে অনেক সময় ডায়াবেটিস রোগ অনেক বাড়িয়ে দেয়। সাধারণত তাই যদি ডায়াবেটিস এবং রক্ষা একসাথে হয় তাহলে রোগীকে অনেক যত্ন সহকারে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। আশা করি ডায়াবেটিস হলে কি যক্ষ্মা নিরাময় সম্ভব? বিষয়টি জানতে পেরেছেন।

ডায়াবেটিস ও যক্ষ্মা হলে কিভাবে চিকিৎসা করবেন

আপনার যদি ডায়াবেটিস এবং যক্ষা একসাথে হয়ে থাকে তাহলে ডায়াবেটিস ও যক্ষ্মা হলে কিভাবে চিকিৎসা করবেন? সে সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকতে হবে। কারণ ডায়াবেটিস রোগের চিকিৎসা করা হলে যক্ষা রোগ বেড়ে যায় আবার যক্ষা রোগের চিকিৎসা করা হলে ডায়াবেটিস বেড়ে যায় যার ফলে শারীরিক অনেক ক্ষতি হয়। এখান থেকে বাঁচতে হলে ডায়াবেটিস ও যক্ষ্মা হলে কিভাবে চিকিৎসা করবেন? সে সম্পর্কে সঠিক তথ্য জেনে নিন।

চিকিৎসা - ১ঃ যদি যক্ষা এবং ডায়াবেটিস একসাথে থাকে তাহলে বিভিন্ন রকমের সমস্যা হয়। কোন রোগের যক্ষার ফলে বুকেও পেটে পানি জমে যায় যার ফলে তাকে যক্ষা রোগের ওষুধ এর সঙ্গে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ দিতে হয়। যা রক্তের শর্করা বা চিনির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। যার ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য স্বাভাবিক প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ইন্সুলেনের দরকার হয়।

চিকিৎসা - ২ঃ ডায়াবেটিস এবং যক্ষা দুটোই শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। যদি একবার ডায়বেটিস হয় তাহলে সারা জীবন এই রোগের সাথে বসবাস করতে হবে। কিন্তু যক্ষা হলে ছয় থেকে নয় মাসের মধ্যে সঠিকভাবে ওষুধ সেবন করলে তার সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যেতে পারে। কিন্তু ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ না করলে যক্ষা রোগের সঠিক চিকিৎসা কোনভাবে সম্ভব হয় না।

আরো পড়ুনঃ কি ফল খেলে লিভার ভালো থাকে

চিকিৎসা - ৩ঃ কোন রোগের ডায়বেটিস যদি নিয়ন্ত্রণে না থাকে তাহলে যক্ষার ওষুধ তার শরীরে সঠিকভাবে কাজ করে না। তাই যক্ষার ওষুধ খাওয়ানোর আগে অবশ্যই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। আবার যক্ষার ওষুধ কিছু ক্ষেত্রে ডায়বেটিস এর ওষুধের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। যদি এ ধরনের সমস্যা হয় তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

চিকিৎসা - ৪ঃ যে সকল ডায়াবেটিস রোগী দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিসের সমস্যায় ভোগে থাকেন তাদের অনেকের ক্ষেত্রে কিডনির কার্যকারিতা কমে যেতে পারে। এসব ক্ষেত্রে যক্ষ্মার ওষুধ কিডনি দ্বারা শরীর থেকে নির্গমন হয় সেগুলোর মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে। কিডনির ডিজিজ থাকলে ডায়াবেটিস রোগীর ইনসুলিন কম দিতে হয়। যার ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে না।

ডায়াবেটিস ও যক্ষ্মা রোগের লক্ষণ

যদি যক্ষা এবং ডায়াবেটিস একই সঙ্গে থাকে তাহলে ডায়াবেটিস হলে কি যক্ষ্মা নিরাময় সম্ভব কিনা? এ বিষয়ে অবশ্যই আপনার জেনে নেওয়া উচিত। এছাড়া আমরা অনেকেই ডায়বেটিস রোগের লক্ষণ সম্পর্কে জানিনা। আপনাদের সুবিধার্থে ডাইবেটিস ও যক্ষা রোগের লক্ষণ নিচে উল্লেখ করা হলো।

ডায়াবেটিস রোগের লক্ষণঃ

  • ঘন ঘন প্রসাব
  • অতিরিক্ত পিপাসা লাগা
  • ক্ষুদা বেড়ে যাওয়া
  • শরীর দুর্বল লাগা
  • মিষ্টি জাতীয় জিনিসের প্রতি আকর্ষণ বেড়ে যাওয়া
  • বিরক্ত মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া।
  • চোখে কম দেখতে শুরু করা
  • কোন কারণ ছাড়াই ওজন কমে যাওয়া

যক্ষা রোগের লক্ষণঃ

  • যক্ষার অন্যতম লক্ষণ হলো কাশি
  • রাতে ঘুমানোর সময় ঘাম।
  • মাঝেমধ্যে বুকে ব্যথা হওয়া।
  • পেটব্যথা
  • কাশি সঙ্গে অল্প পরিমাণে রক্তপাত।
  • ওজন কমে যাওয়া।
  • বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া
  • রাতে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর।
  • খিচুনি বা অজ্ঞান হয়ে পড়া।
  • অনেক সময় যক্ষা রোগের প্রসাবের সঙ্গে রক্ত বের হয়।

আমাদের শেষ কথাঃ ডায়াবেটিস হলে কি যক্ষ্মা নিরাময় সম্ভব

প্রিয় পাঠকগণ আজকের এই আর্টিকেলে ডায়াবেটিস হলে কি যক্ষ্মা নিরাময় সম্ভব? ডায়াবেটিস হলে কি যক্ষ্মার চিকিৎসা করা যায়? ডায়াবেটিস ও যক্ষ্মা হলে কিভাবে চিকিৎসা করবেন, ডায়াবেটিস ও যক্ষ্মা রোগের লক্ষণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি আপনারা উক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।

আরো পড়ুনঃ কিভাবে শরীরের দূর্বলতা কাটাবেন - শরীর দূর্বল লাগার কারণ কি

যেহেতু এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় তাই অবশ্যই আমাদের সকলকে এ বিষয়গুলো সম্পর্কে ধারণা রাখা জরুরী। এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।২০৭৯১

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url