ওযূ: রাসুলুল্লাহর(স) নিয়মে ওযূ-ই পরিপূর্ণ ওযূ; পিছনের গুনাহ মাফের আমল
রাসুলুল্লাহ (স) যে নিয়মে পরিপূর্ণ ওযূ করতেন
حَدَّثَنِي أَبُو الطَّاهِرِ، أَحْمَدُ بْنُ عَمْرِو بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ سَرْحٍ وَحَرْمَلَةُ بْنُ يَحْيَى التُّجِيبِيُّ قَالاَ أَخْبَرَنَا ابْنُ وَهْبٍ، عَنْ يُونُسَ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، أَنَّ عَطَاءَ بْنَ يَزِيدَ اللَّيْثِيَّ، أَخْبَرَهُ أَنَّ حُمْرَانَ مَوْلَى عُثْمَانَ أَخْبَرَهُ أَنَّ عُثْمَانَ بْنَ عَفَّانَ - رضى الله عنه - دَعَا بِوَضُوءٍ فَتَوَضَّأَ فَغَسَلَ كَفَّيْهِ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ ثُمَّ مَضْمَضَ وَاسْتَنْثَرَ ثُمَّ غَسَلَ وَجْهَهُ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ ثُمَّ غَسَلَ يَدَهُ الْيُمْنَى إِلَى الْمِرْفَقِ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ ثُمَّ غَسَلَ يَدَهُ الْيُسْرَى مِثْلَ ذَلِكَ ثُمَّ مَسَحَ رَأْسَهُ ثُمَّ غَسَلَ رِجْلَهُ الْيُمْنَى إِلَى الْكَعْبَيْنِ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ ثُمَّ غَسَلَ الْيُسْرَى مِثْلَ ذَلِكَ ثُمَّ قَالَ رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم تَوَضَّأَ نَحْوَ وُضُوئِي هَذَا ثُمَّ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " مَنْ تَوَضَّأَ نَحْوَ وُضُوئِي هَذَا ثُمَّ قَامَ فَرَكَعَ رَكْعَتَيْنِ لاَ يُحَدِّثُ فِيهِمَا نَفْسَهُ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ " . قَالَ ابْنُ شِهَابٍ وَكَانَ عُلَمَاؤُنَا يَقُولُونَ هَذَا الْوُضُوءُ أَسْبَغُ مَا يَتَوَضَّأُ بِهِ أَحَدٌ لِلصَّلاَةِ .
উসমান ইবনু ‘আফফান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি ওযূর পানি চাইলেন। এরপর তিনি ওযূ করতে আরম্ভ করলেন। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি (হযরত উসমান রা.)
১. তিনবার তাঁর হাতের কব্জি পর্যন্ত ধুলেন,
২.এরপর কুলি করলেন এবং
৩. নাক ঝাড়লেন।
৪. এরপর তিনবার তাঁর মুখমন্ডল ধুলেন এবং
৫. ডান হাত কনুই পর্যন্ত তিনবার ধুলেন। অতঃপর বাম হাত অনুরূপভাবে ধুলেন।
৬. অতঃপর তিনি মাথা মাসাহ করলেন।
৭. এরপর তাঁর ডান পা টাখনু পর্যন্ত তিনবার ধুলেন – অতঃপর তদ্রুপভাবে বাম পা ধুলেন।
তারপর বললেন, আমি রসূলুল্লাহ্(স.)-কে আমার এ ওযূর করার ন্যায় ওযূ করতে দেখেছি এবং ওযূ শেষে রসূলুল্লাহ্(স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার এ ওযূর ন্যায় ওযূ করবে এবং একান্ত মনোযোগের সাথে দু’রাকা’আত সলাত আদায় করবে, সে ব্যক্তির পিছনের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।
সূত্রঃ সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৪২৬
ইবনু শিহাব (র.) বলেন, আমাদের ‘আলিমগণ বলতেন যে, সলাতের জন্য কারোর এ নিয়মের ওযূই হল পরিপূর্ণ ওযূ।
ওযূ
নির্দিষ্ট অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তথা মুখ, দু’হাত, মাথা ও দু’পায়ে পানি ব্যবহার করার নাম ওযূ; যার মাধ্যমে সলাত বা অনুরূপ ইবাদাতে বাধা সৃষ্টি করে এমন কিছু দূর হয়।
অযুর ফযীলত
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত নিম্নোক্ত হাদীস অযুর ফযীলত প্রমাণ করে। তিনি বলেছেন,
«مَا مِنْكُمْ مِنْ أَحَدٍ يَتَوَضَّأُ فَيُسْبِغُ الْوَضُوءَ ثُمَّ يَقُولُ: أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ إِلَّا فُتِحَتْ لَهُ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ الثَّمَانِيَةُ يَدْخُلُ مِنْ أَيِّهَا شَاءَ».
“তোমাদের যে ব্যক্তি পূর্ণরূপে অযু করে এ দো‘আ পাঠ করবে, ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে একমাত্র আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই, আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল’ তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে যাবে এবং যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে।”[1]
অযুতে অপচয় না করে উত্তমরূপে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধৌত করলে কিয়ামতের দিন অযুকারীর হাত-পা ও মুখমণ্ডল উজ্জ্বল থাকা আবশ্যক করবে। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«إِنَّ أُمَّتِي يُدْعَوْنَ يَوْمَ القِيَامَةِ غُرًّا مُحَجَّلِينَ مِنْ آثَارِ الوُضُوءِ، فَمَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمْ أَنْ يُطِيلَ غُرَّتَهُ فَلْيَفْعَلْ»
“কিয়ামতের দিন আমার উম্মতকে এমন অবস্থায় ডাকা হবে যে, অযুর প্রভাবে তাদের হাত-পা ও মুখমণ্ডল থাকবে উজ্জ্বল। তাই তোমাদের মধ্যে যে এ উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে নিতে পারে, সে যেন তা করে।”[2]
অযুর শর্তাবলী
১- ইসলাম।
২- জ্ঞান বা বিবেক।
৩- ভালো-মন্দ পার্থক্যকারী তথা প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া।
৪- নিয়ত করা এবং পবিত্রতা অর্জন শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিয়ত অবশিষ্ট থাকা।
৫- যেসব কারণে অযু ফরয হয় সেসব কারণ দূর হওয়া।
৬- ইস্তিঞ্জা করা (পেশাব ও পায়খানার রাস্তা থেকে নির্গত অপবিত্রতা পানি দ্বারা দূর করা) ও ইস্তিজমার করা (পেশাব ও পায়খানার রাস্তা থেকে নির্গত অপবিত্রতা পাথর বা পাতা বা অনুরূপ জিনিস দ্বারা দুর করা)।
৭- পানি পবিত্র হওয়া।
৮- পানি বৈধ হওয়া।
৯- চামড়ায় পানি পৌঁছতে বাধা থাকলে তা দূর করা।
১০- যে ব্যক্তির সর্বদা অপবিত্র হওয়ার সমস্যা থাকে তার ক্ষেত্রে ফরয সালাতের ওয়াক্ত হওয়া।
অযুর ফরযসমূহ
১- মুখমণ্ডল ধৌত করা আর মুখ ও নাক মুখমণ্ডলেরই অংশ।
২- কনুইসহ দুহাত ধৌত করা।
৩- মাথা মাসেহ করা আর দু’কানও মাথারই অংশ।
৪- দু’পা ধৌত করা।
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِذَا قُمۡتُمۡ إِلَى ٱلصَّلَوٰةِ فَٱغۡسِلُواْ وُجُوهَكُمۡ وَأَيۡدِيَكُمۡ إِلَى ٱلۡمَرَافِقِ وَٱمۡسَحُواْ بِرُءُوسِكُمۡ وَأَرۡجُلَكُمۡ إِلَى ٱلۡكَعۡبَيۡنِۚ٦﴾ [المائدة: ٦]
“হে মুমিনগণ, যখন তোমরা সালাতে দণ্ডায়মান হতে চাও, তখন তোমাদের মুখ ও কনুই পর্যন্ত হাত ধৌত কর, মাথা মাসেহ কর এবং টাখনু পর্যন্ত পা (ধৌত কর)।” [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৬]
৫- ধৌত অঙ্গের মধ্যে পরস্পর ক্রমবিন্যাস বজায় রাখা। কেননা আল্লাহ ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা করেছেন এবং দু অঙ্গ ধোয়ার মধ্যে একটি মাসেহ করার বিষয় উল্লেখ করেছেন। (যা ক্রমবিন্যাস আবশ্যক হওয়া বুঝায়)।
৬- অযু করার সময় এক অঙ্গ ধৌত করার সাথে সাথেই বিলম্ব না করে অন্য অঙ্গ ধৌত করা। কেননা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এভাবে করেছেন।
অযুর সুন্নতসমূহ
১- মিসওয়াক করা।
২- হাত কব্জি পর্যন্ত তিনবার ধৌত করা।
৩- কুলি ও নাকে পানি দেওয়া।
৪- ঘন দাড়ি ও হাত-পায়ের আঙ্গুল খিলাল করা।
৫- ডান দিক থেকে শুরু করা।
৬- দ্বিতীয় ও তৃতীয়বার ধৌত করা।
৭- কান ধোয়ার জন্য নতুন পানি গ্রহণ করা।
৮- অযুর পরে দো‘আ পড়া।
৯- অযুর পরে দু’রাকাত সালাত আদায় করা।
অযুর মাকরূহসমূহ
অযুর মাকরূহসমূহের অন্যতম হলো:
১- অপবিত্রতা ছিটে অযুকারীর দিকে আসতে পারে এমন অপবিত্র স্থানে অযু করা।
২- অযুতে তিনবারের অধিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধৌত করা। কেননা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন তিনবার ধৌত করেছেন। তিনি বলেছেন,
«مَنْ زَادَ عَلَى هَذَا فَقَدْ أَسَاءَ وَظَلَمَ».
“অতঃপর যে ব্যক্তি এর অধিক করে সে অবশ্যই জুলুম ও অন্যায় করে।”[3]
৩- পানি ব্যবহারে অপচয় করা। যেহেতু রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক মুদ পানি দিয়ে অযু করেছেন। আর মুদ হলো এক মুঠো। তাছাড়া যেকোনো কিছুতে অপচয় করা নিষেধ।
৪- অযুতে এক বা একাধিক সুন্নত ছেড়ে দেওয়া; কেননা সুন্নত ছেড়ে দিলে সাওয়াব কমে যায়। তাই সুন্নতের ব্যাপারে যত্নবান হওয়া উচিৎ, ছেড়ে দেওয়া অনুচিত।
অযু ভঙ্গের কারণসমূহ:
অযু ভঙ্গের কারণ সাতটি, সেগুলো হলো:
১- পায়খানা বা পেশাবের রাস্তা দিয়ে কোনো কিছু বের হওয়া।
২- শরীরের অন্য কোনো অঙ্গ থেকে কোনো কিছু বের হওয়া।
৩- পাগল, বেহুশ বা মাতাল ইত্যাদি কারণে জ্ঞানশূণ্য হওয়া।
৪- পুরুষ বা নারী কর্তৃক তাদের লজ্জাস্থান পর্দা ব্যতীত সরাসরি স্পর্শ করা।
৫- পুরুষ নারীকে বা নারী পুরুষকে কামভাবের সাথে স্পর্শ করা।
৬- উটের গোশত খাওয়া।৭- যেসব কারণে গোসল ফরয হয় সেসব কারণে অযুও ফরয হয়, যেমন ইসলাম গ্রহণ ও বীর্য বের হওয়া, তবে মারা গেলে শুধু গোসল ফরয হয়, অযু ফরয হয় না।
ওযূর সুন্নত সমূহ (বিস্তারিত)
ওযূতে নিম্নোল্লিখিত বিষয়গুলো সুন্নত। এগুলোর ওপর নিয়মিত আমল করা উচিত। এগুলোর মাধ্যমে ওযূ সুন্দর হয়। ওযূর আমলগুলো পূর্ণতা লাভ করে।
১. অজুর শুরুতে নিয়ত করা। (বুখারি, হাদিস : ০১)
২. 'বিসমিল্লাহ' পড়া। (আবু দাউদ, হাদিস : ৯২)
৩. উভয় হাতকে কবজি পর্যন্ত ধৌত করা। (মুসলিম, হাদিস : ৩৩১, মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১৬২২৫)
৪. মিসওয়াক করা। (সুনানে কুবরা, হাদিস : ১৮১, আবু দাউদ, হাদিস : ৪২)
৫. কুলি করা। (মুসলিম, হাদিস : ৩৩১)
৬. নাকে পানি দেওয়া। (মুসলিম, হাদিস : ৩৩১)
৭. যদি রোজাদার না হয়, তাহলে ভালোভাবে কুলি করা এবং নাকে পানি দেওয়া। (তিরমিজি, হাদিস : ৭১৮, আবু দাউদ ১২৩)
৮ . প্রতিটি অঙ্গ তিনবার করে ধোয়া। (মুসলিম, হাদিস : ৩৩১)
৯. দাড়ি খিলাল করা। (আবু দাউদ, হাদিস : ১২৩)
১০. আঙুল খিলাল করা। (তিরমিজি, হাদিস : ৭১৮)
১১. পুরো মাথা মাসেহ করা। (আবু দাউদ, হাদিস : ৯৭)
১২. মাথার সামনের অংশ থেকে মাসেহ শুরু করা। (মুসলিম, হাদিস : ৩৪৬)
১৩. উভয় কানের ভেতরে ও বাইরে মাসেহ করা। (আবু দাউদ, হাদিস : ১১৬)
১৪. ধোয়ার সময় অঙ্গগুলোকে মেজে-ঘষে ধোয়া। (আবু দাউদ, হাদিস : ১২৭)
১৫. বাঁ হাত দ্বারা প্রথমে ডান হাত ধৌত করা এবং বাঁ হাত দ্বারা প্রথমে ডান পা ধোয়া। (নাসায়ি, হাদিস : ১১১)
হাদীসঃ
حَدَّثَنِي أَبُو الطَّاهِرِ، أَحْمَدُ بْنُ عَمْرِو بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ سَرْحٍ وَحَرْمَلَةُ بْنُ يَحْيَى التُّجِيبِيُّ قَالاَ أَخْبَرَنَا ابْنُ وَهْبٍ، عَنْ يُونُسَ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، أَنَّ عَطَاءَ بْنَ يَزِيدَ اللَّيْثِيَّ، أَخْبَرَهُ أَنَّ حُمْرَانَ مَوْلَى عُثْمَانَ أَخْبَرَهُ أَنَّ عُثْمَانَ بْنَ عَفَّانَ - رضى الله عنه - دَعَا بِوَضُوءٍ فَتَوَضَّأَ فَغَسَلَ كَفَّيْهِ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ ثُمَّ مَضْمَضَ وَاسْتَنْثَرَ ثُمَّ غَسَلَ وَجْهَهُ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ ثُمَّ غَسَلَ يَدَهُ الْيُمْنَى إِلَى الْمِرْفَقِ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ ثُمَّ غَسَلَ يَدَهُ الْيُسْرَى مِثْلَ ذَلِكَ ثُمَّ مَسَحَ رَأْسَهُ ثُمَّ غَسَلَ رِجْلَهُ الْيُمْنَى إِلَى الْكَعْبَيْنِ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ ثُمَّ غَسَلَ الْيُسْرَى مِثْلَ ذَلِكَ ثُمَّ قَالَ رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم تَوَضَّأَ نَحْوَ وُضُوئِي هَذَا ثُمَّ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " مَنْ تَوَضَّأَ نَحْوَ وُضُوئِي هَذَا ثُمَّ قَامَ فَرَكَعَ رَكْعَتَيْنِ لاَ يُحَدِّثُ فِيهِمَا نَفْسَهُ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ " . قَالَ ابْنُ شِهَابٍ وَكَانَ عُلَمَاؤُنَا يَقُولُونَ هَذَا الْوُضُوءُ أَسْبَغُ مَا يَتَوَضَّأُ بِهِ أَحَدٌ لِلصَّلاَةِ .
‘উসমান ইবনু ‘আফফান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি ওযূর পানি চাইলেন। এরপর তিনি ওযূ করতে আরম্ভ করলেন। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি উসমান (রাঃ)
১. তিনবার তাঁর হাতের কব্জি পর্যন্ত ধুলেন,
২.এরপর কুলি করলেন এবং
৩. নাক ঝাড়লেন।
৪.এরপর তিনবার তাঁর মুখমন্ডল ধুলেন এবং
৫. ডান হাত কনুই পর্যন্ত তিনবার ধুলেন। অতঃপর বাম হাত অনুরূপভাবে ধুলেন।
৬.অতঃপর তিনি মাথা মাসাহ করলেন।
৭. এরপর তাঁর ডান পা টাখনু পর্যন্ত তিনবার ধুলেন – অতঃপর তদ্রুপভাবে বাম পা ধুলেন।
তারপর বললেন, আমি রসূলুল্লাহ্(স.)-কে আমার এ ওযূর করার ন্যায় ওযূ করতে দেখেছি এবং ওযূ শেষে রসূলুল্লাহ্(স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার এ ওযূর ন্যায় ওযূ করবে এবং একান্ত মনোযোগের সাথে দু’রাকা’আত সলাত আদায় করবে, সে ব্যক্তির পিছনের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।
সূত্রঃ সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৪২৬
ইবনু শিহাব বলেন, আমাদের ‘আলিমগণ বলতেন যে, সলাতের জন্য কারোর এ নিয়মের ওযূই হল পরিপূর্ণ ওযূ।
ওযূ নিয়ে আমাদের সমাজের প্রচলিত বিদ'আত
১. ওযূর শুরুতে মুখে নিয়ত বলাঃ
মুখে নিয়ত বলার শারঈ কোন বিধান নেই। রাসুল (স.) ও সাহাবায়ে কেরাম থেকে এ ধরনের কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। এটি মানুষের তৈরী বিধান। অতএব তা পরিত্যাগ করে মনে মনে নিয়ত করতে হবে।
২. ওযূর শুরুতে ‘বিসমিল্লা-হির রহমা-নির রহীম আল-ইসলামু হাক্কুন, ওয়াল কুফরু বাতিলুন, আল-ইমামু নূরুন, ওয়াল কুফরু যুলমাতুন’ দোয়া পাঠ করাঃ
উক্ত দুআর প্রমাণে কোন সহীহ দলীল নেই। এটা পড়লে সুন্নাতের বিরোধিতা করা হবে। উক্ত দু’আটি দেশের বিভিন্ন মসজিদের ওযূখানায় লেখা দেখা যায়। উক্ত দু’আ হতে বিরত থাকতে হবে। বরং ওযুর শুরুতে শুধু ‘বিসমিল্লাহ’ বলতে হবে।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ " لاَ صَلاَةَ لِمَنْ لاَ وُضُوءَ لَهُ وَلاَ وُضُوءَ لِمَنْ لَمْ يَذْكُرِ اسْمَ اللَّهِ عَلَيْهِ
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, যার উযু হয়নি তার সলাত হয়নি এবং যে ব্যক্তি উযুর সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বলেনি তার উযু হয়নি।
সূত্রঃ সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং- ৩৯৯
৩. প্রতিটি অঙ্গ ধৌত করার সময় পৃথক পৃথক দু’আ পড়াঃ
ওযূর প্রত্যেক অঙ্গ ধৌত করার সময় পৃথক পৃথক দু’আ পড়তে হবে এ মর্মে কোন সহীহ হাদীস পাওয়া যায়নি। তবে অন্য শব্দে একটি জাল হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
৪. ওযূর পানি পাত্রের মধ্যে পড়লে উক্ত পানি দ্বারা ওযূ হবে না বলে বিশ্বাস করাঃ
এটি একটি ভ্রান্ত ধারণা। উঁচু স্থানে বসবে, যেন ওযূর পানির ছিটা শরীরে আসতে না পারে। অথচ রাসূলুল্লাহ (স.) পাত্রের মধ্যে হাত ডুবিয়ে দিতেন আবার বের করতেন। এভাবে তিনি ওযূ করতেন।
عَمْرَو بْنَ أَبِي حَسَنٍ سَأَلَ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ زَيْدٍ عَنْ وُضُوءِ النَّبِيِّ، صلى الله عليه وسلم فَدَعَا بِتَوْرٍ مِنْ مَاءٍ، فَتَوَضَّأَ لَهُمْ وُضُوءَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَأَكْفَأَ عَلَى يَدِهِ مِنَ التَّوْرِ، فَغَسَلَ يَدَيْهِ ثَلاَثًا، ثُمَّ أَدْخَلَ يَدَهُ فِي التَّوْرِ، فَمَضْمَضَ وَاسْتَنْشَقَ وَاسْتَنْثَرَ ثَلاَثَ غَرَفَاتٍ، ثُمَّ أَدْخَلَ يَدَهُ فَغَسَلَ وَجْهَهُ ثَلاَثًا، ثُمَّ أَدْخَلَ يَدَهُ فَغَسَلَ يَدَيْهِ مَرَّتَيْنِ إِلَى الْمِرْفَقَيْنِ مَرَّتَيْنِ، ثُمَّ أَدْخَلَ يَدَهُ فَمَسَحَ رَأْسَهُ، فَأَقْبَلَ بِهِمَا وَأَدْبَرَ مَرَّةً وَاحِدَةً، ثُمَّ غَسَلَ رِجْلَيْهِ إِلَى الْكَعْبَيْنِ.
‘আমর ইবনু আবূ হাসান (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু যায়দ (রাযি.)-কে নবী (স.) -এর উযূ সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি এক পাত্র পানি আনলেন এবং তাঁদের (দেখাবার) জন্য নবী (স.) -এর মত উযূ করলেন। তিনি পাত্র থেকে দু’হাতে পানি ঢাললেন। তা দিয়ে হাত দু’টি তিনবার ধুলেন। অতঃপর পাত্রের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে তিন খাবল পানি নিয়ে কুলি করলেন এবং নাকে পানি দিয়ে নাক ঝাড়লেন। তারপর আবার হাত ঢুকালেন। তিনবার তাঁর মুখমন্ডল ধুলেন। তারপর আবার হাত ঢুকিয়ে (পানি নিয়ে) দুই হাত কনুই পর্যন্ত দু’বার ধুলেন। তারপর আবার হাত ঢুকিয়ে উভয় হাত দিয়ে সামনে এবং পেছনে একবার মাত্র মাথা মাসেহ করলেন। তারপর দু’ পা টাখনু পর্যন্ত ধুলেন।
সূত্রঃসহীহ বুখারী, হাদিস নং- ১৮৬
৫. ত্রুটিপূর্ণ কথা বললে ওযূ নষ্ট হয়ে যায়। ওযূর সময় কথা বললে ফেরেশতারা রুমাল নিয়ে চলে যায়ঃ
ওযূকারীর মাথার উপর চারজন ফেরেশতা রুমাল নিয়ে ছায়া করে রাখে। পর পর চারটি কথা বললে রুমাল নিয়ে চলে যায় বলে যে কাহিনী সমাজে প্রচলিত আছে, তা উদ্ভট, মিথ্যা ও কাল্পনিক। তাছাড়া খারাপ কথা বললে ওযূ নষ্ট হয়ে যায় এ আক্বীদাও সঠিক নয়। এ মর্মে যে হাদীস রয়েছে তা জাল।
৬. কুলি করার জন্য আলাদা পানি নেওয়াঃ
সুন্নাত হল হাতে পানি নিয়ে একই সঙ্গে মুখে ও নাকে পানি দেয়া। রাসুল (স.) এভাবেই ওযূ করতেন। তিনি এক অঞ্জলি দ্বারাই কুলি করেন ও নাক পরিষ্কার করেন। আলাদাভাবে পানি নেওয়ার যে হাদিস বর্ণিত, হয়েছে তা যঈফ।
সূত্রঃ সহীহ হাদীস, বুখারী-১৯১। যঈফ হাদীস, আবু দাউদ-১৩৯
৭. কান মাসাহ করার সময় নতুন পানি নেওয়াঃ
ওযূতে কান মাসাহ করার ক্ষেত্রে মাথা ও কান একই সঙ্গে একই পানিতে মাসাহ করবে। রাসূল (স.) এক অঞ্জলি পানি নিতেন এবং হাত ঝাড়তেন। তারপর এর দ্বারা তার মাথা ও কান মাসাহ করতেন। এ জন্য পৃথকভাবে নতুন পানি নেওয়ার প্রয়োজন নেই। রাসূল (স.) বলেন, ‘দুই কান মাথার অন্তর্ভুক্ত’। একই পানিতে মাথা ও কান মাসাহ করার সহীহ হাদীস এসেছে-
عَنْ أَبِي أُمَامَةَ، قَالَ تَوَضَّأَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فَغَسَلَ وَجْهَهُ ثَلاَثًا وَيَدَيْهِ ثَلاَثًا وَمَسَحَ بِرَأْسِهِ وَقَالَ " الأُذُنَانِ مِنَ الرَّأْسِ
আবু উমামা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওযু করলেন। তিনি মুখমণ্ডল ও উভয় হাত তিনবার করে ধুলেন এবং মাথা মসিহ করলেন আর বললেনঃ উভয় কান মাথারই অংশ।
সূত্রঃ সূনান আত তিরমিজী ,হাদিস নং- ৩৭
৮. মাথা ও কান মাসাহ করার জন্য নতুন পানি না নেওয়াঃ
অনেকে দুই হাত ধৌত করার পর সরাসরি মাথা মাসাহ করে, নতুন পানি নেয় না। ভেজা হাত দ্বারাই মাসাহ করে। এটি সুন্নাতের বরখেলাফ। কারণ রাসূল (স.) দুই হাত ধৌত করার পর নতুন পানি নিয়ে মাথা ও কান মাসাহ করতেন।
৯. মাথার এক-চতুর্থাংশ মাসাহ করাঃ
মাথা মাসাহ করার ব্যাপারে অবহেলা ও উদাসীনতা লক্ষ্য করা যায়। কেউ চুল স্পর্শ করাকেই মাসাহ মনে করেন, কেউ মাথার চার ভাগের একভাগ করেন। মাথার চার ভাগের এক ভাগ মাসাহ করার হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে পাগড়ি পরা অবস্থায়। রাসুল (স.) সুন্দর ভাবে মাথা মাসাহ করার পদ্ধতি বর্ণনা করেছেন।
وَهُوَ جَدُّ عَمْرِو بْنِ يَحْيَى ـ أَتَسْتَطِيعُ أَنْ تُرِيَنِي، كَيْفَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَتَوَضَّأُ فَقَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ زَيْدٍ نَعَمْ. فَدَعَا بِمَاءٍ، فَأَفْرَغَ عَلَى يَدَيْهِ فَغَسَلَ يَدَهُ مَرَّتَيْنِ، ثُمَّ مَضْمَضَ وَاسْتَنْثَرَ ثَلاَثًا، ثُمَّ غَسَلَ وَجْهَهُ ثَلاَثًا، ثُمَّ غَسَلَ يَدَيْهِ مَرَّتَيْنِ مَرَّتَيْنِ إِلَى الْمِرْفَقَيْنِ، ثُمَّ مَسَحَ رَأْسَهُ بِيَدَيْهِ، فَأَقْبَلَ بِهِمَا وَأَدْبَرَ، بَدَأَ بِمُقَدَّمِ رَأْسِهِ، حَتَّى ذَهَبَ بِهِمَا إِلَى قَفَاهُ، ثُمَّ رَدَّهُمَا إِلَى الْمَكَانِ الَّذِي بَدَأَ مِنْهُ، ثُمَّ غَسَلَ رِجْلَيْهِ.
‘ইয়াহ্ইয়া আল-মাযিনী (রহ.) হতে বর্ণিত। জনৈক ব্যক্তি ’আবদুল্লাহ্ ইবনু যায়দ (রাযি.)-কে (তিনি ’আমর ইবনু ইয়াহইয়ার দাদা) জিজ্ঞেস করলঃ আপনি কি আমাদেরকে দেখাতে পারেন, কীভাবে আল্লাহর রাসূল (স.) উযূ করতেন? ’আবদুল্লাহ্ ইবনু যায়দ (রাযি.) বললেনঃ ’হাঁ। অতঃপর তিনি পানি আনালেন। হাতের উপর সে পানি ঢেলে দু’বার তাঁর হাত ধুলেন। তারপর কুলি করলেন এবং তিনবার নাকে পানি দিয়ে নাক ঝাড়লেন। অতঃপর চেহারা তিনবার ধুলেন। তারপর দু’হাত কনুই পর্যন্ত দু’বার করে ধুলেন। তারপর দু’হাত দিয়ে মাথা মাসেহ করলেন। অর্থাৎ হাতদু’টি সামনে এবং পেছনে নিলেন। মাথার সম্মুখ ভাগ থেকে শুরু করে উভয় হাত পেছনের চুলের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত নিলেন। তারপর আবার যেখান থেকে শুরু করেছিলেন, সেখানেই ফিরিয়ে আনলেন। তারপর দু’পা ধুলেন।
১০. ওযূতে ঘাড় মাসাহ করাঃ
ওযূতে ঘাড় মাসাহ করার পক্ষে সহীহ কোন প্রমাণ নেই। এর পক্ষে যা কিছু বর্ণিত হয়েছে, সবই জাল ও মিথ্যা। অথচ কিছু আলেম এর পক্ষে মুসলিম জনতাকে উৎসাহিত করেছেন। এভাবেই ভিত্তিহীন আমলটি সমাজে বিস্তারিত লাভ করেছে।
১১. ওযূর পর অঙ্গ মুছতে নিষেধ করাঃ
ওযূ করার পর রুমাল, গামছা কিংবা কাপড় দ্বারা অঙ্গ বুঝতে পারে। এটা ইচ্ছাধীন। যে বর্ণনায় অঙ্গ মুছতে নিষেধ করা হয়েছে, তা জাল ও মিথ্যা।
১২. হাত ধোয়ার সময় কনুই-এর উপরে আরো বেশি করে বাড়িয়ে ধৌত করাঃ
হাত ধৌত করতে হবে কনুই পর্যন্ত। এর বেশি নয়। আল্লাহর নির্দেশ এটাই। হাদীসের শেষে উজ্জ্বল্য বৃদ্ধি করার যে বক্তব্যে এসেছে, তার উদ্দেশ্য অঙ্গ বাড়িয়ে ধৌত করা নায়; বরং ভালোভাবে ওযূ সম্পাদন করা।
يٰۤاَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْۤا اِذَا قُمْتُمْ اِلَي الصَّلٰوةِ فَاغْسِلُوْا وُجُوْهَكُمْ وَاَيْدِيَكُمْ اِلَي الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوْا بِرُءُوْسِكُمْ وَاَرْجُلَكُمْ اِلَي الْكَعْبَيْنِ
‘হে মুমিনগণ, যখন তোমরা নামাযের জন্যে উঠ, তখন স্বীয় মুখমন্ডল ও হস্তসমূহ কনুই পর্যন্ত ধৌত কর, মাথা মুছেহ কর এবং পদযুগল গিটসহ।
১৩. চামড়ার মোজা ছাড়া মাসাহ করা যাবে না বলে ধারণা করাঃ
উক্ত ধারণা সঠিক নয়। বরং যেকোন পবিত্র মোজার উপর মাসাহ করা যাবে। হাদীসে কোন নির্দিষ্ট মোজার শর্তারোপ করা হয়নি।
قَالَ أَبُو دَاوُدَ كَانَ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ مَهْدِيٍّ لَا يُحَدِّثُ بِهَذَا الْحَدِيثِ لأَنَّ الْمَعْرُوفَ عَنِ الْمُغِيرَةِ أَنَّ النَّبِيَّ صلي الله عليه وسلم مَسَحَ عَلَى الْخُفَّيْنِ . قَالَ أَبُو دَاوُدَ وَرُوِيَ هَذَا أَيْضًا عَنْ أَبِي مُوسَى الأَشْعَرِيِّ عَنِ النَّبِيِّ صلي الله عليه وسلم أَنَّهُ مَسَحَ عَلَى الْجَوْرَبَيْنِ . وَلَيْسَ بِالْمُتَّصِلِ وَلَا بِالْقَوِيِّ .
মুগীরাহ ইবনু শু’বাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অযুর সময় জাওরাবাইন এবং উভয় জুতার উপর মাসাহ্ করেছেন।
সূত্রঃ সুনান আবু দাউদ, হাদীস-১৫৯
১৪. ওযূর পর আকাশের দিকে তাকিয়ে দু'আ পড়াঃ
ওযূর দু’আ পড়ার সময় আকাশের দিকে তাকানোর প্রয়োজন নেই। উক্ত মর্মে যে হাদীস বর্ণিত হয়েছে তা যঈফ।
১৫. ওযূর পরে সূরা ক্বদর পড়াঃ
ওযূর পরে সূরা ক্বদর পড়া যাবে না। উক্ত মর্মে যে হাদীস বর্ণিত হয়েছে তা জাল।
১৬. ওযূ থাকা সত্বেও ওযূ করলে দশগুণ নেকীঃ
উক্ত ফযীলত সঠিক নয়। কারণ এ মর্মে বর্ণিত হাদীস জঈফ।
১৭. মুসল্লীর ওযূতে ত্রুটি থাকলে ইমামের ক্বিরাআতে ভুল হয়ঃ
অনেক আলেমের মাঝে উক্ত বিশ্বাস বিদ্যমান রয়েছে। কিন্তু উক্ত মর্মে যে হাদীস বর্ণিত হয়েছে তা জঈফ।
১৮. মাথার চুলের গোড়ায় নাপাকি থাকবে মনে করে সর্বদা মাথার চুল ছোট করে রাখা বা কমিয়ে রাখাঃ
নাপাকির ভয়ে এক শ্রেণীর মুরব্বী সর্বদা মাথা ন্যাড়া করে রাখেন বা চুল খুব ছোট করে রাখেন এবং একে খুব ফযীলতপূর্ণ মনে করেন। আলী (রাঃ) এরুপ করতেন বলে তারা এর অনুসরণ করে থাকেন। অথচ উক্ত মর্মে যে বর্ণনা প্রচলিত আছে তা যয়ঈ, যা মোটেই আমলযোগ্য নয়।
ধন্যবাদ
সুন্দর একটি ফিচার পড়লাম